পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: একটি সহজ গাইড
পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: একটি সহজ গাইড
বিদেশে ভ্রমণ, উচ্চশিক্ষা বা চিকিৎসার জন্য পরিকল্পনা করছেন? আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পাসপোর্ট তৈরি করা। কিন্তু অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন যে, পাসপোর্ট করার জন্য ঠিক কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন। চিন্তার কিছু নেই! এই পোস্টে আমরা সহজভাবে আলোচনা করবো বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার জন্য সাধারণত কোন কোন ডকুমেন্ট লাগে সে বিষয়ে।
মনে রাখবেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে আবেদনকারীর বয়স, পেশা বা অন্য কোনো বিশেষ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে কিছু মৌলিক ডকুমেন্ট সবার জন্যই প্রয়োজন হয়।
সাধারণভাবে যা যা প্রয়োজন (সবার জন্য):
- অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্রের প্রিন্টেড কপি (Application Summary): ই-পাসপোর্ট পোর্টালে (www.epassport.gov.bd) আবেদন পূরণ করার পর যে সামারি পাবেন, সেটির প্রিন্ট কপি লাগবে। এপয়েন্টমেন্ট স্লিপও সাথে রাখবেন।
- অনলাইন পেমেন্টের স্লিপ বা ব্যাংক ভেরিফাইড রসিদ: নির্ধারিত পাসপোর্ট ফি (সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে বা অনলাইনে এ-চালানের মাধ্যমে) জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC):
- যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)-এর মূল কপি ও ফটোকপি জমা দেওয়া আবশ্যক।
- যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, তারা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC)-এর মূল কপি ও ফটোকপি জমা দেবে, যাতে অবশ্যই ১৭ ডিজিটের নম্বর থাকতে হবে।
- গুরুত্বপূর্ণ: NID এবং BRC-তে দেওয়া আপনার নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা যেন অভিন্ন ও সঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- নাগরিক সনদ/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট (প্রয়োজন অনুযায়ী): অনেক সময় ঠিকানা প্রমাণের জন্য এটি চাওয়া হতে পারে, যদিও বর্তমানে NID/BRC কেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিশেষ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যা লাগতে পারে:
- পূর্ববর্তী পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে): আপনি যদি আগে পাসপোর্ট করে থাকেন (MRP বা হাতে লেখা), তবে পুরোনো পাসপোর্টের মূল কপি এবং ডাটা পেজের (ছবি ও তথ্য সম্বলিত পাতা) ফটোকপি জমা দিতে হবে। হারিয়ে গেলে জিডির কপি লাগবে।
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য: সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত গভর্নমেন্ট অর্ডার (GO) বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)-এর মূল কপি জমা দিতে হবে।
- পেশাগত প্রমাণপত্র: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী বা অন্যান্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে পেশাগত সনদের ফটোকপি লাগতে পারে। ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স।
- বিবাহিতদের জন্য: স্বামী/স্ত্রীর নাম সংযোজন বা পরিবর্তনের জন্য নিকাহনামা (Marriage Certificate) এবং স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে: তালাকনামা (Divorce Certificate)।
- ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য:
- পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি।
- ৬ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে 3R সাইজের (ল্যাব প্রিন্ট, ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ড) ছবি প্রয়োজন হবে। ৬ বছরের বেশি বয়সীদের ছবি পাসপোর্ট অফিসেই তোলা হবে।
- ঠিকানা প্রমাণের জন্য সাপোর্টিং ডকুমেন্ট: অনেক সময় ইউটিলিটি বিলের (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি) সাম্প্রতিক কপি চাওয়া হতে পারে, যদিও NID/BRC যথেষ্ট হওয়ার কথা।
কিছু জরুরি বিষয় মনে রাখবেন:
- সঠিকতা: আবেদনপত্রে দেওয়া সকল তথ্য যেন আপনার NID/BRC এবং অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে হুবহু মিলে যায়। তথ্যের গড়মিল থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে বা পাসপোর্ট পেতে দেরি হতে পারে।
- মূল কপি ও ফটোকপি: সাধারণত সব ডকুমেন্টের মূল কপির পাশাপাশি এক সেট সত্যায়িত (ক্ষেত্রবিশেষে) বা সাধারণ ফটোকপি সাথে নেওয়া ভালো। পাসপোর্ট অফিসে আপনার মূল কপিগুলো দেখে ফেরত দেওয়া হবে।
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: সবসময় সর্বশেষ তথ্য এবং নির্দেশনার জন্য বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.epassport.gov.bd) ভিজিট করুন। নিয়মকানুন সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে।
- সত্যায়ন: বর্তমানে বেশিরভাগ ডকুমেন্টের সত্যায়ন প্রয়োজন হয় না, তবে NOC/GO এর মতো কিছু কাগজ সত্যায়িত লাগতে পারে। ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
- বায়োমেট্রিক তথ্য: পাসপোর্ট অফিসে আপনার ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ স্ক্যান করা হবে। তাই নির্ধারিত তারিখে সশরীরে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।
আশা করি, পাসপোর্ট করতে কী কী কাগজপত্র লাগে সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে এবং প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট সাথে রাখলে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। আপনার বিদেশ যাত্রার প্রস্তুতি শুভ হোক!